স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আত্মঘাতী যুবক।
নিউজ বেঙ্গল ৩৬৫ ডেস্ক, বাঁকুড়া : স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে বড়জোড়া থানার মালিয়াড়ায়। মৃত যুবকের নাম কাজল ওরফে বিশ্বদেব দীক্ষিত। তার স্ত্রী নয়ন ও দুই মেয়ে কোয়েল ও দোয়েলের আঘাত গুরুতর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে প্রথমে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রবিবার ভোর বেলায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথম স্ত্রীর ঘাড়ে আঘাত করেন। স্ত্রীর চিৎকারে মেয়েদের ঘুম ভেঙে গেলে ছোট মেয়েকে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরেন। তারপর কোয়েলকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। নয়নদেবীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে বাইরে বেরিয়ে দরজায় শিকল তুলে দিয়ে বিশ্বদেব দীক্ষিত উঠোনের কূয়োতে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন। বিশ্বদেবের ভাগ্নে বিধান রায় বলেন, মামার তিনটি মেয়ে। বড় মেয়ে কোয়েল মালিয়াড়া সন্তোষ গার্লস হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। ছোট মেয়ে দুটি যমজ। এক মেয়ে পায়েল মামাবাড়ি ডাং-মেজিয়ায় মামা বাড়িতে থাকে বলে সে বেঁচে গেছে। বিধান রায় বলেন মামা ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। মাসে ৭-৮ হাজার টাকা মাইনেতে ৩ মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। তারপর মদ খাওয়াও ধরে ছিলেন। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। শনিবার সন্ধ্যায় একটি মন্দিরে পুজো দেন। অনেকে তাকে পুজো দেওয়ার পর মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতে দেখেছেন। বিধান রায় আরও জানান তিন মেয়ে হওয়ায় মামা কিছুটা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে ইদানিং মদ খাওয়ার পরিমাণও বেড়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে রোজ ঝগড়া হতো মামী মায়ের সঙ্গে। কোয়েলের জ্ঞান ছিল। আমাদের এক প্রতিবেশী মামা বাড়িতে ফুল তুলতে এসেছিলেন । কোয়েল জানলা দিয়ে ওই বৃদ্ধাকে জানায় ঘটনার কথা। উনি আমার মাকে এসে ঘটনার কথা বললে আমরা মামা বাড়িতে এসে দেখি মামা কূয়োর ভিতরে ঝুলছেন। তখনও কোয়েলের জ্ঞান ছিল। দোয়েল জানায়, বাবা রাতে বাড়ি ফিরেই মায়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে। খাবার সময় আমাদেরকে বাবা সম্ভবত ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল। সেজন্য আমরা অঘোরে ঘুমিয়ে ছিলাম। সে মা ও বোনকে দেখে আবার জ্ঞান হারায়। মালিয়াড়া ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে সকলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। বিশ্বদেববাবু এতটা নিশংস হয়ে কেন উঠলেন, সে প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিবেশীরা জানান, শুনেছিলাম ও যেখানে কাজ করতো সেই মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকদের মাইনে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা কমে গেছে। গত ৩ বছর ধরে এভাবেই চলছে। এই নিয়ে ঠিকা শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিলেন। এ মাস থেকেই মাইনে বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় মানসিকভাবে তিনি আরো ভেঙে পড়েছিলেন। দিন দিন যে হারে যে হারে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে তাতেই তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রতিবেশীদের ধারণা।পুলিশ জানিয়েছে কেন এমন ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।