“আস্থার অপর নাম মাস্টার”
সৌরেন দাস, নিউস বেঙ্গল 365,আসানসোল: কোভিড-১৯ অতিমারীতে সমগ্র বিশ্ব তথা দেশ ব্যাপী সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেমন বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তেমনই আমাদের দেশের কথা যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে দরিদ্র অসংগঠিত শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, ও আদিবাসী মানুষ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।এই অতিমারী দরিদ্র সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন জীবিকা, অর্থনীতির পাশাপাশি তাদের সন্তানদের প্রথাগত শিক্ষার উপর একটা বিরাট প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র, দুঃস্থ আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা। কারণ সেই সকল ছাত্রছাত্রীদের বাবা মা বেশিরভাগই অসংগঠিত শ্রমিক অথবা পরিযায়ী শ্রমিক শ্রেণীভুক্ত। অর্থাভাবে যাদের চিরসঙ্গী, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, যাদের ছেলেমেয়েদের যথাযথ শিক্ষা সামগ্রী দূরের কথা সামান্য স্লেট পেনসিল কেনার সামর্থ্য নেই ,তাদের কাছে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ একটা অলীক কল্পনা। এই অবস্থায় তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে এলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্থিত আসানসোল নিকটবর্তী জামুড়িয়া ১ চক্রের ‘তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র শিক্ষক শ্রী দীপ নারায়ণ নায়ক। তিনি এই সকল ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জবা (শিমুলিয়া) গ্রাম, পো: বোগড়ার অন্তর্গত শিমুলিয়া পাড়া, কাঁঠাল পাড়া, মালতী পাড়া, বাউরি পাড়া, নীচু জবা পাড়া, উপর জবা পাড়া প্রভৃতি এলাকায় গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের লকডাউন স্পেশাল ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেন, এর পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী, পেন, পেনসিল,ও লকডাউন স্পেশাল প্রশ্নপত্র ইত্যাদি। এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে করোনার বর্তমান আবহে রোগের সাথে লড়বার জন্য তাদের মুখে তুলে দিচ্ছেন পুষ্টিকর খাদ্য। একই সঙ্গে এলাকার দরিদ্র, দুঃস্থ আদিবাসী মানুষের জন্য, বেশ কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকশিক্ষিকাদের সহযোগিতায় কমিউনিটি কিচেন গড়ে তুলে রান্না করা পুষ্টিকর খাদ্য তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। করোনা রোগের সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলবার প্রয়াসে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে সচেতন করেছেন। সকলকে পাশে নিয়ে, সকলের কথা ভেবে সংঘবদ্ধভাবে যেমন কাজ করেছেন, তেমনই একক প্রয়াসেও শিক্ষক শ্রী দীপ নারায়ণ নায়ক মহাশয় তাঁর সন্তান তুল্য ছাত্রছাত্রীদের রবীন্দ্রনাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্ত প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করেছেন। এদিন শিক্ষক শ্রী দীপ নারায়ণ নায়ক বলেন, আস্থার অপর নাম মাস্টার। বর্তমান সময়ে করোনার সাথে লড়াইতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, যেমন- পুলিশ, ডাক্তার, নার্স, সাফাই কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী ইত্যাদি সম্মুখ সমরে উপস্থিত থেকেছেন, তেমনি শিক্ষক সমাজের অবদানকেও তিনি অটুট হাতে ধরে রাখতে চেষ্টা করেছেন মাত্র। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি বিন্দু মাত্র বিস্মৃত হননি তাঁর কর্তব্য। তিনি আরও বলেন, সাধারনত: সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গরীব ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করতে আসে, কিন্তু বিগত ৫ মাস ধরে লকডাউনে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন ও মিড ডে মিল সম্পূর্ণ বন্ধ। তাই যেসমস্ত গরীব ছাত্রছাত্রী অনলাইন পড়াশুনাও করতে পারছে না তাদের জন্য শিক্ষক হিসেবে তিনি বাড়ীতে না বসে থেকে অল্প অল্প করে ছাত্র ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করে তাদের পাড়ায় গিয়ে তাদের পড়াশুনার ব্যবস্হা করানোর চেষ্টা করেছেন ও একই সঙ্গে তাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। তার এই প্রচেষ্টা শিক্ষক সমাজের আরও অনেককেই অনুপ্রাণিত করবে এই আশা রাখা যায়। সত্য সত্যই তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ‘শিক্ষক সমাজের মেরুদণ্ড’, যা সমাজের প্রতিটি মানুষকে মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে বাঁচতে শেখায়।