নিউজ বেঙ্গল ৩৬৫ ডেস্ক : এক্কেবারে ওভার বাউন্ডারি।লোকসভা ভোটের নিরিখে হাফ সেন্বুরির খুব কাছেই বিজেপি। একলাফে ১৮ টি আসন বিজেপির দখলে। লক্ষ্য এখন ২০২১। আর সেই লক্ষ্যেই রীতিমত কোমড় বেধে নেমেছে গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যে মসনদ দখলের জন্য ঘুটি সজাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। ইতিমধ্যেই তৃণমূল ভেঙে বেশ কয়েকজন বিধায়ক থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছে পদ্ম শিবিরে। গেরুয়া হাওয়ায় জোড়াফুল প্রায় টালমাটাল অব্স্থা। যদিও ইদানিং শুরু হয়েছে ” ঘর ওয়াপসি”। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় বিজেপি ত্যাগের হিড়িক লেগেছে। সেই তালিকায় আছেন গঙ্গারামপুরের প্রভাবশালী বিপ্লব মৈত্র থেকে শুরু করে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া তুষার ভট্টাচার্যও। রাজ্যের শাসক দলের দাবী, এই তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। তবে কি দুর্বল হচ্ছে বিজেপি? না এর উত্তর দেওয়ার সময় এখনও আসেনি। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে বিধানসভা পর্যন্ত। তবে স্ট্র্যাটেজিগত কারণে বিজেপি বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের। এর পিছনের কারন কি? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই, এরজন্য দায়ী করছেন দিলীপ ঘোষকে। যা নিয়ে এরইমধ্যে দলের অন্দরে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এমনকি আদৌ দিলীপ ঘোষের আর সভাপতি থাকা ঠিক কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে দলেরই একাংশ। বর্তমানে চূড়ান্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে আসছে বঙ্গ বিজেপির। কার্যত আড়াআড়িভাবে বিভক্ত মুরলীধর সেন লেন। একদিকে দিলীপ ঘোষ-সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, অপরদিকে মুকুল রায় -সৌমিত্র খান-অর্জুন সিংয়েরা। সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসন প্রাপ্তির জন্য মুকুলের ক্যারিশমাকেই সিলমোহর দিয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। যা একেবারেই মানতে নারাজ দিলীপ গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে মন্ডল সভাপতি নিয়োগ নিয়েও হয় আর্থিক লেনদেন নয়ত গোষ্ঠীকোন্দল সামনে আসছে। দলের একটা বড় অংশের অভিযোগ, সভাপতি হিসাবে কোন্দ্ল আটকাতে কার্যত ব্যার্থ তিনি। এমনকী অসুখের কারন না খুজে “সব জেনেও চুপ থাকছেন তিনি”। ইতিমধ্যেই একের পর এক দলত্যাগের ঘটনা ঘটছে। যার বেশীরভাগের কারন হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর দলে সঠিক মর্যাদা না পাওয়া। এমনকী দিল্লিতে রাজ্যে নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বৈঠকেও দিলীপ-সুব্রতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপিতে “মুকুল ঘনিষ্ট” বলে পরিচিত সৌমিত্র খান, নিশীথ অধিকারী, অর্জুন সিংয়েরা। এমনকি বৈঠক শেষ না করেই কলকাতা ফিরে আসেন মুকুল রায়। এর পাশাপাশি একজন রাজ্য সভাপতি হিসাবে দিলীপ ঘোষের বেশ কিছু মন্তব্য আখেরে দলেরই ক্ষতি করছে বলে মনে করছে রাজ্য নেতৃত্বের একটা বড় অংশ। সদ্য প্রাক্তন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় ও নাম না করে দিলীপ ঘোষের ” গো-বোলীও” মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন।।সূত্রের খবর, মুকুল রায়কে দলে নেওয়া হলেও, তাকে খুব একটা সক্রিয় হতে দিচ্ছেন না দিলীপ ঘোষ। বিজেপির একাংশের বক্তব্য, মুকুল ঘনিষ্ঠ সৌমিত্র খান যেন কোনভাবেই যুব মোর্চার সভাপতি না হতে পারেন তারজন্য প্রবল চেষ্টা চালিয়েছেন দিলীপ-সুব্রত। তবে শেষপর্যন্ত তা করতে না পেরে, সৌমিত্র’র মনোনীত জেলা সভাপতিদের তালিকা অনুমোদন না করে ফিরিয়ে দেন রাজ্য সভাপতি। একইভাবে সাধারন সম্পাদক পদে দুই মুকুল ঘনিষ্ট ড: অনুপম হাজরা ও শঙ্কুদেব পন্ডার নামে আপত্তি জানিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। মুরলীধর সেন লেনে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে কোনভাবেই মুকুল ঘনিষ্ঠ কাউকে নতুন করে কোন গুরুত্বপুর্ণ পদে রাখা হবে না। ইতিমধ্যেই যুব মোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খানের একাধিক কর্মসূচিতে বাধ সেজেছেন দিলীপ ঘোষ। শুধু তাই নয়, রীতিমত সাংবদিক ডেকে নাম না করে মুকুল রাযকে উদ্দেশ্য করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ” বাংলায় বিজেপিকে আনতে দিলীপ ঘোষ একাই যথেষ্ট।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ” একের পর এক নেতা-কর্মীরা যখন দল ছাড়ছেন, দিলীপ দা সেদিকে নজর না দিয়ে উল্টে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানোর তত্ত্ব খাড়া করছেন, কর্মীরা মনোবল হারাচ্ছে, আর উনি সেদিকে নজর দিচ্ছেন না।” এমনকি দিলীপ ঘোষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে ভুলে গিয়েছেন বলেও মত দলের একাংশের। সব মিলিয়েই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যে বিজেপির সব থেকে বাধার নাম দিলীপ ঘোষ।