বিশেষ সম্পাদকীয় #অনুপ্রেরণা-
দেবাশীষ দাশগুপ্ত।
কাগজে পড়লাম, লোকাল ট্রেনে দুই যাত্রীর মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব কেমন করে বজায় রাখা হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রেল কর্তারা। রাজ্য সরকার চায়, এসব বিষয় মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে ট্রেন চালাক রেল মন্ত্রক। এখন রেল কর্তারা বুঝছেন, শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। ইতিমধ্যে নাকি রেল কয়েকটি স্টেশনে গোল্লা কেটেছে। সেই গোল্লা কে মানবে, না তা মানা সম্ভব? কে জানে। করোনার প্রথম পর্বে মুখ্যমন্ত্রী বাজারে গিয়ে এরকম খড়ির গণ্ডী কেটেছিলেন। রেল কর্তাদের এই দুশ্চিন্তা প্রসঙ্গেই বলি, শহর এবং শহরতলিতে সরকারি, বেসরকারি বাস চলছে। নবান্ন শুরুতে সতী সেজে বলেছিল, বাসের ভাড়া বাড়ানো যাবে না। তা নিয়ে অনেক অলীক কুণাট্য হয়েছে গত কয়েক মাসে। বাস মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছেন। যাত্রীরা তা দিচ্ছেনও বটে। নবান্ন প্রথম দিকে বলেছিল, বাসে দূরত্ব বিধি মানতে হবে। পরে বলা হল, কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। কোথায় গেল সে সব হুমকি? এখন বাস চলছে অনেক। তাতে ঠাসাঠাসি ভিড়। নিরাপদ দূরত্ব? মাথায় থাক। দম বন্ধ করা ভিড় সব বাসে। গায়ের উপর হুমড়ি খাওয়া ভিড়। দিন কয়েক আগে বেলঘরিয়ায় যেতে হয়েছিল একটা কাজে। যাতায়াতের পথে বাসে যে ভিড় দেখেছি বা বলা ভালো, যে ভাবে ভিড় বাসে চড়েছি, তাতে করোনার সংক্রমণ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। উপায়ও নেই। মানুষকে রুটি রুজির কারণে ঝুঁকি নিয়েই বেরোতে হচ্ছে।দেখার কেউ নেই। নিজের সমস্যা নিজেকেই মেটাতে হবে। তাই রেল কর্তাদের বলছি, অত ভেবে লাভ নেই। খুলে দিন সব কিছু। এখন দৈনিক সংক্রমণ দেশে ৯০ হাজার হচ্ছে। লোকাল ট্রেন চললে না হয় ওটা দেড় লাখ হবে। কী আছে? শেষ কথা বলি, করোনা নিয়ে অনেকদিন মোদিজির ভাষণ শুনি না। প্লিজ, মোদিজি, জাতির উদ্দেশে আর একদিন ভাষণ দিন না। একটু অনুপ্রেরণা পাই। এখানে রাজ্যবাসীকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার লোক আছে। ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানে খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বলতে শুনলাম, মুখ্যমন্ত্রী নাকি তাঁরও অনুপ্রেরণা। সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! ভাগ্য ভালো। ডিজি কিংবা কলকাতার পুলিশ কমিশনার ভারতী ঘোষের মতো মুখ্যমন্ত্রীকে মা বলে ডাকেননি।
( লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক এই সময় পত্রিকার প্রাক্তন সহ: সম্পাদক ও রাজ নৈতিক বিশ্লেষক)