ডাইনি প্রথার বশবর্তী হয়ে আজও অনেক উপজাতিদের বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাতে হয়
নিউজ বেঙ্গল ৩৬৫, ডেস্ক, ত্রিপুরা : ডাইনি প্রথা একটি অভিশাপ যা বিশেষ করে উপজাতি জনবসতি এলাকাগুলোতেই একমাত্র লক্ষ্য করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে এই ডাইনি প্রথার বশবর্তী হয়ে অনেক উপজাতি রমণী যুবতী এবং শিশু বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাতে হয়েছে। শুধু তাই নয় এই ডাইনি প্রথার জন্য গ্রাম ছাড়া ঘর ছাড়া হয়ে এক সময়ে এক যুবতীকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল মুঙ্গিয়াকামী এলাকায়। বেশকিছুদিন থেমে থাকলেও ফের একবার মুঙ্গিয়াকামী এলাকায় ডাইনি প্রথার শিকার হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অনেক উপজাতি যুবতী। এমনই এক ঘটনার ফুটন্ত চিত্র ধরা পড়লো আমাদের ক্যামেরায়। উল্লেখ্য তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামি ব্লকের অধীনে উওর মহারানী এলাকায় 12 বছরের এক শিশুকন্যাকে ডাইনি অপবাদে গ্রামের মানুষের আক্রমণের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছিল। সেটা ছিল 2016 সালের ঘটনা। আমরা এই প্রথমবার এই ডাইনি প্রথার কুসংস্কারের ঘটনাগুলি আমাদের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করেছিলাম। এর কিছুদিন পরই আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছিল এই ডাইনি প্রথাগুলি। আমরা বারবার সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করার পর খোয়াই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এর নজরে আসে ঘটনাবলী। তখনই ওই এলাকা থেকে 17 জন যুবতীকে যাদের ডাইনি সন্দেহে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ করে ঘরে ফেরানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও ফের একবার মুঙ্গিয়াকামি এলাকার 41 মাইল গ্রামে এক গৃহবধুর ডাইনি প্রথার শিকার হয়ে বিনা চিকিৎসায় গৃহবন্দি হয়ে আছে। উল্টোদিকে সেই গৃহবধূর বাবা নিজ মেয়েকে ঘরে রেখেই হাজার হাজার টাকা খরচ করে ওঝা ও তান্ত্রীকের মাধ্যমে মেয়েকে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন। জানা যায় ওই এলাকার লিচু রাম রিয়াং এর মেয়েকে গত আষাঢ় মাসের 3 তারিখ কাঞ্চনপুর এলাকায় বিয়ে দেন। বিয়ের দু’দিনের মাথায় মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেয় খাওয়া-দাওয়া। আজ প্রায় তিন মাস সেদিনের পর থেকেই বাবা লিচুরাম রিয়াং নিজবাড়ী আঠারোমুড়া নিয়ে আসে। আজ সে চিকিৎসার বাহিরে। শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। জুমিয়া পরিবারটির শেষ সম্বল জুমের ফসলও বিক্রি করে ওঝাকে ও তান্ত্রীককে দিতে দিতে শেষ। এর উপর তিনটি শূকর কিছু মোরগ ও হাস ডাইনি পূজা দিয়ে খরচ করে নিয়েছেন। অসহায় পিতা এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে মেয়েকে সুস্থ করার জন্য। তবে কি ডাইনি প্রথার এই অকাল গ্রাস থেকে এখনো কুসংস্কার দূর করতে পারেনি প্রশাসন। এখন দেখার বিষয় আমাদের সংবাদ সম্প্রচারের পর রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর কিংবা সমাজসেবী সংগঠন মেয়েটিকে বাঁচাতে কতদূর এগিয়ে আসেন। তবে একটা কথা না বললেই না হয়, বর্তমান মানব সভ্যতার যুগে এ ধরনের কুসংস্কার সত্যিই বিরল।